দেশের স্বার্থে ঐক্য অটুট রাখার প্রত্যয়ব্যক্ত করে সাতক্ষীরায় জামায়াতে ইসলামী, বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর নেতারা বলেছেন, আমরা রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ন হবো না। আমরা হবো সহনশীল এবং পরমত সহিষ্ণু। জুলাই বিপ্লবের শহিদদের রক্তের দাগ শুকায়নি। বাংলাদেশের আকাশে আবারো সেই কালো শকুনের ছায়া। এই কালো শকুন যেন আমাদের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের স্বাধীনতাকে ভুলুন্ঠিত করতে না পারে। সেজন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এদেশকে আমরা সম্মিলিতভাবে এগিয়ে নিতে চাই।
সাতক্ষীরাসহ দেশের সার্বিক উন্নয়নের প্রশ্নে আমরা সবাই এক। আমাদের এই একতা যেন অটুট থাকে। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই যেখানে সাম্প্রতিক সম্প্রীতি এবং পারস্পরিক সহমর্মিতা অক্ষুণ্ণ থাকবে। কেউ আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। এজন্য আমাদের ঐক্যের কোন বিকল্প নেই। ১৯৯১ সাল সাল থেকে বিএনপি-জামায়াত জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াত জোট অতীতে ঐক্যবদ্ধ ছিল এখনো আছে। রাজনৈতিক মতাদর্শ ভিন্ন হতে পারে কিন্তু দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের প্রশ্নে আমরা আপোষহীন আছি এবং ভবিষ্যতে থাকবো।
সাতক্ষীরায় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্মানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাতক্ষীরা জেলা শাখার ইফতার মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠানে বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ নেতারা এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের অন্যতম সদস্য অধ্যক্ষ মুহাঃ ইজ্জত উল্লাহ।
রোববার (২৩ মার্চ) বিকালে শহরের শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্ক সংলগ্ন পৌর অডিটরিয়ামে এ ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর উপাধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম মুকুলের সভাপতিত্বে ও জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী মাওলানা আজিজুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ইফতার মাহফিলে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মো. মনিরুল ইসলাম, জামায়াতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারী ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য মুহাদ্দিস রবিউল বাশার, সাবেক এমপি গাজী নজরুল ইসলাম, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক রহমতুল্লাহ পলাশ, সদস্য সচিব আবু জাহিদ ডাবলু, যুগ্ম-আহ্বায়ক তাসকিন আহমেদ চিশতি, আবুল হাসান হাদী, সাতক্ষীরা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহ আলম, ইসলামি আন্দোলন জেলা শাখার সহ-সভাপতি প্রভাশক ওয়েজ কুরুণী প্রমুখ।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর শেখ নূরুল হুদা, ডাক্তার মাহমুদুর রহমান, গাজী সুজায়েত আলী, জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী মাহবুবুর রহমান, প্রভাষক ওবায়দুল্লাহ, প্রভাষক ওমর ফারুক, মাওলানা ওসমান গণি, অফিস সেক্রেটারী মাওলানা রুহুল আমিন, শহর শাখার আমীর জাহিদুল ইসলাম, সদর উপজেলা শাখার আমীর মাওলানা মোশারফ হোসেন প্রমুখ। ইফতার মাহফিলে জাতীয় নেতা, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি, পেশাজীবী, শিক্ষাবিদ, কবি—সাহিত্যিক, ডাক্তার, সাংবাদিক, গবেষক, ব্যবসায়ী ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
এসময় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীদের মধ্যে পারস্পারিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতিময় মিলনমেলায় পরিণত হয়। পারস্পারিক আলাপ-আলোচনায় মুখরিত হয়ে ওঠে পৌর অডিটরিয়াম।
ইজ্জত উল্লাহ বলেন, জুলাই বিপ্লবে যারা প্রাণ দিয়েছেন, আজকের এই দিনে তাদেরকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। তারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন বলেই আজ আমরা উন্মুক্ত পরিবেশে আপনাদের সাথে বসে ইফতার করতে পারছি। যারা শাহাদাত বরণ করেছেন তাদের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করছি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারী ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের পর শত শহীদের বিনিময়ে আমরা আবার এক হতে পেরেছি। আমরা কথা বলার অধিকার ফিরে পেয়েছি। পেয়েছি স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করার অধিকার। বাংলাদেশের আকাশে আজ কালো মেঘের ঘনঘটা। বাংলাদেশের আকাশে আবারো কালো শকুনের ছায়া। এছায়া যেন আমাদের শান্তি বিনাশের কারণ না হয়। সুযোগ এসেছে স্বাধীনতার সেই সোনার ফসল ঘরে তোলার। আমারা সুখী, সমৃদ্ধশালী, উন্নত এক শান্তিময় বাংলাদেশ কায়েম করতে চাই। যেখানে থাকবে না হিংসা, হানাহানি। থাকবে না কোন বৈষম্য। সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই।’
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক রহমতুল্লাহ পলাশ বলেন, আমরা ১৯৯১ সাল থেকে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন ও আন্দোলন করে আসছি। এদেশের গণতন্ত্রের মুক্তির আন্দোলনে আমরা ঐক্যবদ্ধ। আমাদের এ ঐক্য অটুট থাকবে।
খুলনা গেজেট/এএজে